রনি আহম্মেদমঙ্গলবার, ১৪ জুলাই ২০২০, সকাল ৫:৩ সময়0538
ছবি,সংগৃহীত
রনি আহম্মেদ যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এর মাধ্যমে অবসান হল শিল্প খাতের এক অপ্রতিরুদ্ধ উদ্যোক্তার। সোমবার বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে (সাবেক এ্যাপোলো) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে সারাটি জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন শিল্প খাতের এই সফল ‘আইকন’। মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীনের পর দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন দুর্নীতি ও ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে সাহসী এই কণ্ঠস্বর। একে একে গড়ে তোলেন ৪১টি সফল শিল্পপ্রতিষ্ঠান। অন্যায়ের কাছে জীবনে কখনও মাথা নত করেননি। রক্তচক্ষুর ভয়ে কখনও ভীত বা একচুলও পিছপা হননি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নই ছিল যার স্বপ্ন। বনানী করবস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আজ চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন সেই স্বপ্নবাজ মানুষটি। এর আগে আজ বাদ জোহর যমুনা ফিউচার পার্কে সীমিত পরিসরে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন মন্ত্রী, রাজনৈতিক দলের নেতা, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।১৯৪৬ সালের ৩ মে ঢাকার দোহারে জন্মগ্রহণ করেন শিল্প খাতের এই অপ্রতিরুদ্ধ উদ্যোক্তা। ১৯৭১ সালে দেশমাতৃকাকে রক্ষায় অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ব্যবসায়িক জীবনে অত্যন্ত সফল মানুষটির স্বপ্ন ছিল মানুষের কর্মসংস্থান। এর ধারাবাহিকতায় যমুনা গ্রুপের আওতায় একে একে গড়ে তোলেন যমুনা স্পিনিং, যমুনা ইলেকট্রনিক্স এবং পেগাসাস লেদারের মতো ৪১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তার প্রতিষ্ঠিত দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন মিডিয়া জগতে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে।
১৯৭৪ সালে নুরুল ইসলাম যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একের পর এক এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে নুরুল ইসলাম একজন আধুনিক চিন্তার সাহসী উদ্যোক্তা। বর্তমানে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ কাজ করছে এই যমুনা গ্রুপে। এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক, যমুনা নির্মাণাধীন ম্যারিয়টস হোটেলসহ শিল্প ও সেবা খাতে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে গ্রুপটি। ইলেকট্রনিক্স, বস্ত্র, নিটওয়্যার, ওভেন গার্মেন্টস, রাসায়নিক, চামড়া, মোটরসাইকেল, বেভারেজ টয়লেট্রিজ, নির্মাণ এবং আবাসন খাতে ব্যবসায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই গ্রুপ। সর্বশেষ রাজধানীর কুড়িলে ৩০০ ফুটের কাছে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে এর প্রাথমিক আলোচনাও শেষ করেছিলেন। চলমান করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া সহজ ও সুলভ মূল্যে যমুনা তৈরি করছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। গুণগত মানের দিক থেকে যমুনা গ্রুপ স্বাস্থ্যসম্মত পিপিই তৈরি করছে। তার স্ত্রী সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বর্তমান জাতীয় সংসদের এমপি অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। ছেলে শামীম ইসলাম যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তিন মেয়ে- সারীয়াত তাসরীন সোনিয়া, মনিকা নাজনীন ইসলাম এবং সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম যমুনা গ্রুপের পরিচালক। ১৯৪৬ সালের ৩ মে ঢাকার দোহারে জন্মগ্রহণ করেন শিল্প খাতের এই অপ্রতিরুদ্ধ উদ্যোক্তা।
তার মৃত্যুতে দেশের শিল্প খাতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় অসময় চলে গেলেন তিনি। করোনার সংকট কাটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার মতো উদ্যোক্তার খুবই দরকার ছিল। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।